মাত্র ২৩ দিনে করোনায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২০ আগস্ট) করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩ জন।
সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ১৬ জন। করোনায় দ্রুততম সময়ে এত সংক্রমণ ও মৃত্যুর কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে, এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি ঠিক মতো না মানলে সংক্রমণ তো বেশি হবেই। সংক্রমণ বেশি হলে সঙ্গত কারণে মৃত্যুও বেশি হবে। এটাই এই রোগের নিয়ম। এর প্রতিকার হচ্ছে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ভ্যাকসিন নেওয়া। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও অবশ্যই বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। যতোটা সম্ভব বাসায় থাকতে হবে। নইলে এই করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘‘পরিসংখ্যান মতে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় লেগেছে ছয় মাসেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা পাঁচ থেকে ১০ হাজার হতে সময় লেগেছে প্রায় সাত মাস। মৃত্যু সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার যেতে সময় লেগেছে দুই মাস ১৯ দিন। ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজারে পৌঁছেছে মাত্র ২৪ দিনে। সর্বশেষ ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ মারা গেছে মাত্র ২৩ দিনে। ‘এত দ্রুততম সময়ে মানুষের সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগের সংক্রমণের সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য রয়েছে।” উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পরে ৭০ বছর বয়সি প্রথম পুরুষ রোগী মারা যান ১৮ মার্চ ২০২০ সালে। প্রথম রোগী মারা যাওয়ার দুই মাস ২২ দিন পরে, ১০ জুন ২০২০ সালে মৃতের সংখ্য দাঁড়ায় এক হাজার জনে। এই সময়ে গড় মৃত্যু ছিল দিনে ১২ জন। ক্রমে এক হাজার থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে তিন মাস ১২ দিন। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার সাত জনে। এই সময়ে দিনে গড় মৃত্যু ছিল ৩৯ জন। পাঁচ হাজার থেকে সেই সংখ্যা ১০ হাজারে যেতে সময় লাগে ছয় মাস ২২ দিন। এসময় করোনায় শনাক্ত এবং মৃতের হার ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮১ জনে। এই সময়ে গড় মৃত্যু ছিল ২৫ জন। এরপর রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়ার আন্তঃজেলা গণপরিবহন। সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি ট্রেন এবং সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত দুই ঈদে মানুষজনের রাজধানী ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি। বিভিন্ন উপায়ে মানুষ রাজধানী ছেড়েছে এবং রাজধানীতে আবার ফিরেও এসেছে। অপরদিকে ভারতের বর্ডার বন্ধ থাকলেও বৈধ-অবৈধ উপায়ে মানুষ ভারতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শরীরে বহন করে তা ছড়িয়েছে সারা দেশে। যার কারণে ঢাকায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমে গিয়ে দেশের অন্য জেলাসমূহে তা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮১ জন, সেখানে মাত্র দুই মাস ১৯ দিনে (৭৯ দিনে) ১০ হাজার থেকে বেড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৬৫ জন। এসময় দিনে গড়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৩ জন। ১৫ থেকে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার হতে সময় লেগেছে মাত্র ২৪ দিন।
গত ৪ জুলাই থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষ মারা গিয়ে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। এসময়ে গড়ে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২০৯ জনেরও বেশি। ২৮ জুলাই ২০২১ মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ১৬ জন। মাত্র ২৩ দিনে (২৯ জুলাই- ২০ আগস্ট) করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ১৬ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ২৩ জন। এ ২৩ দিনে গড়ে মৃতের সংখ্যা ২১৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এক দিনে করোনায় সমানভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে (৫ ও ১০ আগস্ট) ২৬৪ জন। আর সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে (২ আগস্ট) ১৫ হাজার ৯৮৯ জন। শুক্রবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ২৩ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ২০৩ জন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।